ঢাকা,শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪

ফসলের ব্যাপক ক্ষতি, সমগ্র চকরিয়া বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন

চকরিয়ায় শিলাবৃষ্টিসহ কালবৈশাখী ঝড়ে শতাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্থ

এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: কক্সবাজারের চকরিয়ায় ১৫ মিনিটের কালবৈশাখীর তান্ডবে অন্তত শতাাধিক ঘরবাড়ি বিধ্বস্থ’ হয়েছে। এসময় বাতাসের প্রচন্ড ধাক্কায় ছোট-বড় গাছপালা উপড়ে পড়ে উপজেলার আঠার ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। একইসঙ্গে আভ্যন্তরিণ একাধিক সড়কে পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পাশাপাশি অতিরিক্ত শিলাবৃষ্টির কারণে সবজিসহ রকমারি ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধান হয়েছে বলে ধারণা করছেন উপজেলা কৃষি বিভাগ। বুধবার ২০ এপ্রিল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে পুরো উপজেলায় হঠাৎ করে কাল বৈশাখীর ঝড়-বাতাস শুরুহয়। সাথে শিলাবৃষ্টিও পড়ে।

কালবৈশাখী তাণ্ডবের পর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে রাত আটটায় এ রির্পোট লেখা পর্যন্ত সমগ্র চকরিয়া উপজেলা বিদ্যুৎহীন রয়েছে। এই অবস্থায় উপজেলা সদরের বাণিজ্যিক জনপদে জেনারেটর চালু রেখে ঈদ বাজারের কেনাকাটা সামাল দিচ্ছেন মার্কেট মালিক ও ব্যবসায়ীরা। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কক্সবাজারের সভাপতি মো.হায়দার আলী। তিনি বলেন, কালবৈশাখী তাণ্ডবে চকরিয়া উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বসতঘর ছাড়া সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে গাছ পড়ে বিদ্যুৎ তার ছিঁেড় গেছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়ার মুলকেন্দ্র দোহাজারী লাইনে গাছ উপড়ে পড়ার ঘটনা ঘটেছে।

তিনি বলেন, কাকারা ইউনিয়নে পল্লী বিদ্যুতের ট্রান্সফরমার সহ খুটি ভেঙ্গে পড়েছে। যতদুর সম্ভব জনগনের মাঝে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই একসঙ্গে কাজ শুরু করেছেন। আশাকরি সহসা বিদ্যুৎ সরবরাহ দিতে পারবো।

চকরিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মকছুদুল হক ছুট্ট বলেন, কালবৈশাখীর ছোবলে উপজেলার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় কালবৈশাখীর ঝড়ো হাওয়ায় বসতবাড়ির ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। বিশেষ করে ঘরবাড়ির উপর ছোটবড় গাছ উপড়ে পড়ে ভেঙ্গে গেছে অন্তত শতাধিক বসতঘর। তবে কেউ আহতের কোন খবর পাওয়া যায়নি।

ডুলাহাজারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হাসানুল ইসলাম আদর বলেন, কালবৈশাখীর ছোবলে ইউনিয়নের সোয়াজনিয়া, ছগিরশাহ কাটা ও রিংভং এলাকায় রিজার্ভ বনভূমিতে ৬টি বসতবাড়িতে মাদারট্রি পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোকে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে তাৎক্ষনিক কিছু পরিমাণ আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে কালবৈশাখী তাণ্ডবে উপজেলার একাধিক ইউনিয়নে রকমারি সবজি ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষকরা। উপজেলার কাকারা ইউনিয়নের করলা চাষি রিদুয়ানুল হক বলেন, সম্প্রতি ৪০ শতক জমিতে করলা ক্ষেত শুরু করি। চারাও বেশ লম্বা হয়। ফুল আসতে আরো সপ্তাহ খানেক লাগবে। এতে হঠাৎ করে কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির কারণে ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে আমার এক লক্ষ্য টাকা ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া সম্ভব নয়।

চকরিয়া পৌরসভার কাজিরপাড়ার কৃষক জমির উদ্দিন বলেন, কালবৈশাখী সঙ্গে শিলাবৃষ্টি হওয়ায় সবজি ক্ষেতে ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে। মাতামুহুরী নদীর তীর লাগোয়া কাজিরপাড়া বিলের বেশিরভাগ কৃষকের সবজি ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে।

এদিকে উপজেলার বিভিন্ন বাড়িঘরে গ্রীষ্মকালীন ফল আম বড় হতে শুরু করেছে। কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির কারণে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কাঁচা আম ঝরে পড়েছে।

চকরিয়া উপজেলা কৃর্ষি কর্মকর্তা এসএম নাছিম হোসেন বলেন, সরেজমিন সবজি ও ফসলি ক্ষেতের ক্ষতির পরিমান নির্র্ণয় করতে ব্লক পর্যায়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

চকরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান বলেন, ইতোমধ্যে কালবৈশাখী তাণ্ডবে গাছপালা পড়ে ক্ষতিগ্রস্থ ঘরবাড়ির সংখ্য নির্ধারণপূর্বক ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের তালিকা তৈরী করতে সকল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপর বিষয়টি জেলা প্রশাসককে প্রতিবেদন আকারে জানানো হবে। বরাদ্দ প্রাপ্তি সাপেক্ষে ক্ষতিগ্রস্থ পরিবার গুলোকে উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সহযোগিতা দেয়া হবে।

 

 

পাঠকের মতামত: